আমাদের দেশের রান্নায় ঘি একটি অতি পরিচিত নাম। ছোটবেলা থেকেই মায়ের হাতে ঘি দিয়ে ভাত, ডাল, খিচুড়ি কিংবা রুটি খেয়েছি আমরা অনেকেই। অনেকেই মনে করেন, ঘি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, এতে নাকি ওজন বেড়ে যায় বা শরীরে চর্বি জমে। কিন্তু আসলে কি তাই? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, ঘি শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যেও অনেক উপকারি। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো, ঘি কেন স্বাস্থ্যকর, ঘি-তে কী কী পুষ্টিগুণ আছে এবং ঘি খেলে আমাদের শরীরে কী কী উপকার হয়।


বিলোনা ঘি কী এবং কীভাবে তৈরি হয়?

বিলোনা পদ্ধতিতে ঘি তৈরীর জন্য দুধ জাল করে বিভিন্ন ছোট ছোট পাতিলে সারারাত রেখে দেয়া হয় তখন পাতিলের দুধ গুলো ফার্মেন্টশনের ফলে দইয়ে পরিণত হয় এবং দইএর প্রতিটি পাতিলের দইএর উপরে মোটা ফার্মেন্টেড (গাঁজানো) সরের স্তর জমা পড়ে এই সরের স্তর গুলো উঠিয়ে আলাদা পাত্রে ১-২ দিন বা তার বেশিদিন রেখে ফার্মেন্টশন করা হয়। ফলে এই সরের মধ্যে আয়ুর্বেদিক পুষ্টিগূন তৈরী হয়।

এই প্রক্রিয়ায় ঘি তৈরী করতে ২-৪ দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে। আগের দিনে আমাদের মা চাচিরা বা দাদি নানীরা এইভাবে দুধের সর কয়েকদিন ধরে সর জমা করে তারপর সেটাকে মাখনে পরিনত করতেন।

আর এই মাখনকেই স্লো কুকিং প্রসেসে বা অল্প আঁচে জাল করে ঘি তৈরী করা হয়।


বিলোনা ঘি-এর পুষ্টিগুণ

বিলোনা ঘি-তে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। নিচে ঘি-এর প্রধান পুষ্টিগুণগুলো তুলে ধরা হলো:

  1. ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে
    • ঘি-তে ফ্যাট-সলিউবল (চর্বিতে দ্রবণীয়) ভিটামিন থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
    • ভিটামিন এ চোখের জন্য, ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য, ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য এবং ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দরকারি।
  2. ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড
    • ঘি-তে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  3. বিউটিরিক অ্যাসিড
    • ঘি-তে থাকা বিউটিরিক অ্যাসিড আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজমে সাহায্য করে।
  4. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
    • ঘি-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

বিলোনা ঘি অর্ডার করতে ক্লিক করুন! https://asli.com.bd/product/bilona-sorer-ghee/


বিলোনা ঘি-এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. হজম শক্তি বাড়ায়

ঘি-তে থাকা বিউটিরিক অ্যাসিড অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি অন্ত্রের দেয়ালকে মজবুত করে এবং হজমে সাহায্য করে। অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক, বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ঘি খেলে উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে, সকালে খালি পেটে এক চামচ ঘি খেলে হজমশক্তি বাড়ে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

ঘি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঘি খেলে শরীরের ইমিউনিটি বাড়ে, ফলে সহজে সর্দি-কাশি বা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

৩. ত্বক ও চুলের যত্নে

ঘি-তে থাকা ভিটামিন ই ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারি। ঘি খেলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়, চুলও শক্ত ও ঝলমলে হয়। অনেকেই সরাসরি ত্বকে বা চুলে ঘি ব্যবহার করেন, এতে শুষ্কতা কমে যায়।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

অনেকে মনে করেন ঘি খেলে ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, পরিমিত পরিমাণে ঘি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ, ঘি-তে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে জমে থাকা খারাপ চর্বি গলাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।

৫. হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো

ঘি-তে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারি। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। তবে, যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঘি খাওয়া উচিত।

৬. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারি

ঘি-তে থাকা ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। শিশুদের ও বয়স্কদের জন্য ঘি খুবই উপকারি।

৭. মানসিক স্বাস্থ্যে উপকার

ঘি-তে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ব্রেইনের জন্য ভালো। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, মন ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী বা অফিসে যারা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাদের জন্য ঘি উপকারি।

৮. গর্ভবতী ও শিশুর জন্য উপকারি

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঘি খুবই উপকারি। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভের শিশুর বিকাশে সাহায্য করে। শিশুরা ঘি খেলে তাদের হাড়, দাঁত ও মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়।

৯. শরীরের শক্তি বাড়ায়

ঘি-তে থাকা ফ্যাট শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা খেলাধুলা করেন, তাদের জন্য ঘি খুবই উপকারি। এটি শরীরকে ক্লান্তি থেকে মুক্ত রাখে।

১০. প্রদাহ কমায়

ঘি-তে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথায় ঘি উপকারি হতে পারে।


বিলোনা ঘি অর্ডার করতে ক্লিক করুন! https://asli.com.bd/product/bilona-sorer-ghee/


ঘি খাওয়ার সঠিক উপায়

বিলোনা ঘি খাওয়ারও কিছু নিয়ম আছে। অতিরিক্ত ঘি খাওয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিমিত ঘি খাওয়া উপকারি। সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে ১-২ চামচ ঘি যথেষ্ট। রান্নায় তেল বা ডালের বদলে ঘি ব্যবহার করতে পারেন। রুটি, ভাত, খিচুড়ি, ডাল, সবজি, পায়েস, হালুয়া ইত্যাদিতে ঘি ব্যবহার করা যায়।


ঘি নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

১. ঘি খেলে ওজন বেড়ে যায়:

  • আসলে, পরিমিত ঘি খেলে ওজন বাড়ে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২. ঘি খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে:

  • ঘি-তে ভালো কোলেস্টেরল থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারি। তবে, যাদের কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা আছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শে খাবেন।

৩. ডায়াবেটিস রোগীরা ঘি খেতে পারবেন না:

  • ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমিত ঘি খেতে পারেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে।

বাজারের ঘি বনাম বিলোনা ঘি

বাজারে অনেক ধরনের ঘি পাওয়া যায়, কিন্তু সব ঘি-ই খাঁটি নয়। অনেক সময় বাজারের ঘি-তে কেমিক্যাল বা ভেজাল মেশানো থাকে। তাই চেষ্টা করুন অর্গানিক ঘি খাওয়ার। ঘরেই সহজে ঘি তৈরি করা যায়, এতে কোনো কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভ থাকে না।


বিলোনা ঘি সংরক্ষণের উপায়

ঘি সাধারণত ফ্রিজে না রেখেও অনেকদিন ভালো থাকে। তবে, পরিষ্কার ও শুকনো কাঁচের বোতলে ঘি রাখুন। সরাসরি রোদ বা পানির সংস্পর্শে রাখবেন না। এতে ঘি অনেকদিন ভালো থাকবে।


সবশেষে বলা যায়, বিলোনা ঘি শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যেও অনেক উপকারি। এতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীর, মন, ত্বক, চুল, হাড়, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারি। তবে, সবকিছুর মতোই ঘি-ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খেলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবারে পরিমিত ঘি রাখুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

বিলোনা ঘি অর্ডার করতে ক্লিক করুন! https://asli.com.bd/product/bilona-sorer-ghee/

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published.